দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী
মিঠুন চক্রবর্তী, বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা, এবার 'দাদাসাহেব ফালকে' পুরস্কার পাচ্ছেন। এই পুরস্কারটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।
মিঠুন চক্রবর্তী, যিনি "মহাগুরু" নামে পরিচিত, ভারতীয় সিনেমায় তার অনবদ্য অবদানের জন্য দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাচ্ছেন। তার দীর্ঘ ও সাফল্যমণ্ডিত ফিল্মি ক্যারিয়ারকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, যা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চলমান।
মিঠুন চক্রবর্তীর ক্যারিয়ার
- ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি: মিঠুন চক্রবর্তী ভারতীয় সিনেমার এক স্বর্ণালী অধ্যায়, যিনি একাধিক সফল সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের মনে একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেছেন।
- জাতীয় পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ: এর আগেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ সম্মান লাভ করেছেন, যা তার কাজের প্রতি স্বীকৃতি এবং প্রশংসা।
মিঠুন চক্রবর্তীর অর্জন
মিঠুন চক্রবর্তী তার ক্যারিয়ারে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং তিনি বহু জনপ্রিয় সিনেমার জন্য পরিচিত। তার অভিনয় দক্ষতা এবং বৈচিত্র্যময় চরিত্রে পারফরম্যান্স তাকে একটি বিশেষ অবস্থানে নিয়ে গেছে।
মিঠুন চক্রবর্তীর জন্য দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ঘোষণার এই সুখবরটি সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অশ্বিনী বৈষ্ণ এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করেন যে, "মিঠুন দা’র অসাধারণ সিনেম্যাটিক সফর সব প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। কিংবদন্তি অভিনেতাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেকশন জুরি। ভারতীয় চলচ্চিত্রে মিঠুনজির অসামান্য অবদান রয়েছে।"
দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার
দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার হল ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সম্মানগুলোর মধ্যে একটি। এটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক দাদাসাহেব ফালকের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে, যিনি 1913 সালে "রাজা হরি শচন্দ্র" নামক প্রথম ভারতীয় মৌলিক চলচ্চিত্রটি তৈরি করেছিলেন।
দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের উদ্দেশ্য
- অসামান্য অবদান: এই পুরস্কারটি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদান রাখার জন্য প্রদান করা হয়। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিনয়, পরিচালনা, চিত্রগ্রহণ, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রযোজ্য।
- শিল্পের উন্নতি: পুরস্কারটি চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতি এবং নতুন প্রতিভাদের প্রোত্সাহিত করতে সাহায্য করে।
পুরস্কার প্রদান
- প্রথম পুরস্কার: 1969 সালে প্রথমবার এই পুরস্কারটি প্রদত্ত হয়। প্রথম প্রাপক ছিলেন পরিচালক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
- উল্লেখযোগ্য প্রাপক: অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী ও পরিচালকদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যেমন রাজকুমার সন্তোষী, সচীন তেন্ডুলকর, মিঠুন চক্রবর্তী, এবং আরও অনেকে।
পুরস্কারের গুরুত্ব
- সম্মাননা: এটি শিল্পীদের জন্য একটি বিশাল সম্মান, যা তাদের কাজের মূল্যায়ন করে এবং চলচ্চিত্রের প্রতি তাদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দেয়।
- জনপ্রিয়তা: পুরস্কারটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং উৎসাহ বাড়ায়।দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন, যা প্রতিবার শিল্পীদের কাছে প্রশংসিত হয় এবং তাদের কাজের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
৮ অক্টোবর ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে মিঠুন চক্রবর্তীকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করা হবে, যা তার দীর্ঘ এবং সফল চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের জন্য একটি বিশেষ স্বীকৃতি। এই ঘোষণার পরপরই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত পরিচালক কুণাল ঘোষ মহাগুরুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
কুণাল ঘোষের মন্তব্য
কুণাল ঘোষ মিঠুন চক্রবর্তীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, "মিঠুন চক্রবর্তী একজন সত্যিকার মহান শিল্পী, যার অভিনয় ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্ব দর্শকদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।"
কুণাল ঘোষ তার ফেসবুক পোস্টে মিঠুন চক্রবর্তীকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, “দাদাসাহেব ফালকে পাচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী। শিল্পী মিঠুনদাকে অভিনন্দন। শুধু অনুরোধ, দীর্ঘ উপেক্ষার পর আপনার পদ্মশ্রীর জন্য প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টার দিনগুলো এবং সেইসঙ্গে মমতাদির আপনাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে স্বীকৃতিদান ভুলে যাবেন না।”
কুণাল ঘোষের বক্তব্যের গুরুত্ব
অভিনন্দন: কুণাল ঘোষ মিঠুন চক্রবর্তীর অসাধারণ কাজের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখ: কুণাল প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবদানের কথা স্মরণ করেছেন, যিনি মিঠুনের পদ্মশ্রী পুরস্কারের প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখও কুণাল ঘোষের পোস্টে এসেছে, যিনি মিঠুনকে রাজ্যসভায় পাঠানোর মাধ্যমে তার স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন।
সম্প্রতি কলকাতায় আসেন মিঠুন চক্রবর্তী, তার পুজায় মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমা “শাস্ত্রী” এর প্রচার অনুষ্ঠানে। তার বয়স ৭০ পেরিয়ে গেলেও, কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
মিঠুন চক্রবর্তীর অবিচল মনোভাব
- শারীরিক সমস্যা: গত মাসে তার হাতের হাড় ভেঙে ৬ টুকরা হয়ে গিয়েছিল, তবে সে শারীরিক অবস্থার মধ্যেও তিনি কলকাতায় প্রচারের কাজে হাজির হয়েছিলেন।
- কাজের প্রতি নিষ্ঠা: তার এই প্রতিশ্রুতি এবং কাজের প্রতি নিবেদন সত্যিই প্রশংসনীয়। বয়স বাড়লেও, মিঠুন চক্রবর্তী তার অভিনয় এবং সিনেমার প্রতি ভালোবাসা বজায় রেখেছেন।
সিনেমা “শাস্ত্রী”
- পূজা উপলক্ষে মুক্তি: সিনেমাটি পুজোর সময় মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত, যা কলকাতার দর্শকদের মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করবে।
- মিঠুনের ভূমিকা: মিঠুন চক্রবর্তী সিনেমায় তার চরিত্রের জন্য একবার又 অভিনবত্ব আনতে চেষ্টা করছেন, যা দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় হবে।
মিঠুন চক্রবর্তীর এই দৃঢ়তা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা তাকে একটি আইকনিক ফিগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার এই প্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা।
মিঠুন চক্রবর্তীর ফিল্মি ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় ১৯৭৬ সালে, যখন তিনি বাঙালি পরিচালক মৃণাল সেনের হাত ধরে “মৃগয়া” ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। তবে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
বলিউডে প্রথম পদার্পণ
- চেহারা এবং গায়ের রঙের জন্য কটাক্ষ: মিঠুনের চেহারা এবং গায়ের রঙ নিয়ে অনেক নির্মাতা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাকে বলেছিলেন, “আয়নারে নিজের মুখ দেখেছো? কোনো দিক থেকে হিরোসুলভ ব্যাপার আছে তোমার চেহারায়?”
- বাতিল করা দরজা: কাজ চাইতে গেলে অনেকের কাছে তাকে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতা তার জন্য দুঃখজনক হলেও, তিনি দমে যাননি।
অদম্য মনোবল
- জেদের বশে সফলতা: মিঠুন চক্রবর্তী জেদের বশে দর্শকদের কাছে “ডিস্কো ডান্সার” হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেন। তার কঠোর পরিশ্রম এবং সংকল্প তাকে সাফল্যের পথে নিয়ে যায়।
- শুরুর কঠিন দিনগুলি: শুরুর দিনগুলো সহজ ছিল না, কিন্তু মিঠুনের প্রতি বিশ্বাস এবং পরিশ্রম তাকে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে।
মিঠুন চক্রবর্তীর এই যাত্রা সত্যিই অনুপ্রেরণাময়, যা দেখায় কিভাবে দৃঢ় সংকল্প এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সফলতা অর্জন করা যায়। তিনি আজও অভিনয়ের ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য, এবং তার গল্প নতুন প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ।
মিঠুন চক্রবর্তীর জীবনকাহিনী সত্যিই প্রেরণাদায়ক, বিশেষ করে তার স্ট্রাগলিং পিরিয়ডের কথা। তখন তার পকেটের অবস্থা ছিল খুব খারাপ, এবং অনেক দিনই তার দুই বেলা পেট ভরার জন্য দু’মুঠো ভাতও জুটতো না। সেই কঠিন সময়ে, খাবারের আশায় তিনি হাইপ্রোফাইল পার্টিগুলোতে নাচতেন।
কঠিন সময়ের স্মৃতি
নাচের মাধ্যমে জীবিকা: মিঠুন একবার একটি রিয়ালিটি শো’য়ে অশ্রুসজল চোখে তার অতীতের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি ভেবেছিলাম কেউ আমাকে হিরো হিসেবে সিনেমায় সুযোগ করে দেবে না। তাই আমি নাচের দিকে ঝুঁকে যাই। বিশেষ করে ডান্স।”
ভিলেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ: সেই সময়ে, তিনি ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে প্রদর্শন করতেন।
খরচ বাঁচানোর জন্য পদব্রজ: জীবিকার তাগিদে, তিনি কাজের জায়গায় পায়ে হেঁটে যেতেন, যাতে কিছু পয়সা বাঁচাতে পারেন।
নতুন পথে যাত্রা
মিঠুনের এই আত্মত্যাগ এবং সংকল্পই তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে সাহায্য করেছে। তার জীবনযাত্রা দেখায়, কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এবং নিজের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে সাফল্য অর্জন করা যায়।
মিঠুন চক্রবর্তীর এই অভিজ্ঞতা আজকের তরুণদের জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ, যে স্বপ্নের পেছনে ছুটে যাওয়ার জন্য কখনও নিরাশ হওয়া উচিত নয়, বরং সংকল্প এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো সম্ভব।
মিঠুন চক্রবর্তীর এই অর্জন তার দীর্ঘ এবং সফল চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের জন্য একটি বিশেষ সম্মান, যা তার কাজের প্রতি স্বীকৃতি এবং ভালোবাসা।