“হাসিনা গেছে যে পথে, চুপ্পু যাবে সে পথে”

“শেখ হাসিনা গেছে যে পথে, চুপ্পু যাবে সে পথে”—এই স্লোগানটি সম্প্রতি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে শোনা যাচ্ছে। এটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন (চুপ্পু) এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থানকে ইঙ্গিত করে তৈরি হয়েছে।


“হাসিনা গেছে যে পথে, চুপ্পু যাবে সে পথে”


বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নতুন করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি জানাচ্ছে। এই স্লোগানটি তাদের ক্ষোভ এবং হতাশার প্রতিফলন, যেখানে তারা রাষ্ট্রপতিকে শেখ হাসিনার মতোই পদত্যাগের পথ দেখাতে চায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যের প্রতিবাদে নোয়াখালীতে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এই মিছিলটি মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং রাষ্ট্রপতির মন্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মিছিল করে।

এই ধরনের বিক্ষোভ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, বিশেষত ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পতনের পরে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং জনতার মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নোয়াখালীতে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। মিছিলকারীরা স্লোগান দেন, "শেখ হাসিনা গেছে যে পথে, চুপ্পু যাবে সে পথে," যা ছিল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি এবং তার বক্তব্যের প্রতিবাদে। 

মিছিলে আরও স্লোগান দেওয়া হয়, যেমন: "জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে," "ধরো রশি মারো টান, চুপ্পু হবে খান খান," এবং "দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত।" আন্দোলনকারীরা দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি করে এসব স্লোগান দেয়।

এ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন এবং বিরোধী পক্ষের দাবির প্রতীকী উদাহরণ।

বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দ্বিমুখী বক্তব্য মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, দুই মাসের ব্যবধানে রাষ্ট্রপতির পরস্পরবিরোধী বক্তব্য তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "খুনি হাসিনাকে এ দেশে আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না," এবং দাবী করেন, ছাত্রসমাজ আর কোনো চাটুকার বা দোসরদের গ্রহণ করবে না।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজ তাদের শক্তিশালী অবস্থান প্রদর্শন করেছে এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের দাবিগুলিকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. আরিফুল ইসলাম নোয়াখালী কলেজে এক বক্তব্যে বলেছেন যে বিপ্লব কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হয় না। তার মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে পড়ে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়েছেন, এবং তার পদত্যাগপত্র আছে কি না তা ছাত্রসমাজের চিন্তার বিষয় নয়। 

তিনি আরও দাবি করেছেন যে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগ করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক বনি আমিন, আওয়ামী লীগের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর সমর্থকদের নিকৃষ্টতম স্লোগানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়ক, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। 

তিনি নিশ্চিত করেন যে, আওয়ামী লীগ ও এর দোসরদের খণ্ডন করা হবে এবং তাদের যে কোনো চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে। বনি আমিন আরও দাবি করেন, হত্যার নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না এবং বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

এই বক্তব্যগুলো গতকালের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এসেছে, যেখানে ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দ্বিমুখী বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দমননীতির বিরুদ্ধে এবং ছাত্রসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন।

বিক্ষোভের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতার উপস্থিতি ছিল, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো. আরিফুল ইসলাম, ফরহাদুল ইসলাম, মাজহার রাকিব, আফসার বিন আজিজ এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্র মাজহারুল ইসলাম রাকিব। 

এছাড়া, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি খলিলুর রহমান, নোয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আকবর, আইনজীবী রবিউল হাসান পলাশ, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য আবদুজ জাহের এবং ইসলামী ছাত্রশিবির নোয়াখালী শহর শাখার প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন।

এই আন্দোলন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দ্বিমুখী বক্তব্যের প্রতিবাদে এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজের ভূমিকা নিয়ে উত্থাপিত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দমননীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকবে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url