মেছতার মূল কারণ ও মেছতা নির্ণয়ের পদ্ধতি
মেছতা (Melasma) হলো একটি ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা, যা সাধারণত ত্বকের ওপর বাদামী বা ধূসর-বাদামী দাগ হিসেবে প্রকাশ পায়। এটি মুখের বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয়, যেমন গাল, কপাল, এবং ঠোঁটের উপরে।
মেছতার মূল কারণ
সূর্যের UV রশ্মি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা মেছতা সৃষ্টি করতে পারে।গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহারের সময় এবং অন্যান্য হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মেছতা হতে পারে।কিছু মানুষের মধ্যে মেছতা হওয়ার প্রবণতা জিনগত হতে পারে।কিছু স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের কারণে ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, যা মেছতার সৃষ্টি করতে পারে।
মেছতা কত প্রকার
মেছতা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে,
ইপিডারমাল হাইপারপিগমেন্টেশন (Superficial Melasma): এই ধরনের মেছতা ত্বকের উপরের স্তর অর্থাৎ ইপিডারমালে ঘটে। এটি সাধারণত সূর্যের আলো, হরমোনের পরিবর্তন, এবং কিছু ঔষধের কারণে হতে পারে। ইপিডারমাল মেছতা সাধারণত বেশি উজ্জ্বল এবং চিকিৎসা করলে দ্রুত সেরে যায়।
ডার্মাল হাইপারপিগমেন্টেশন (Dermal Melasma): এই ধরনের মেছতা ত্বকের গভীর স্তর অর্থাৎ ডার্মালে ঘটে। এটি সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী এবং ত্বকের গভীর অংশে মেলানিনের জমার কারণে হয়। ডার্মাল মেছতা নিরাময়ের জন্য অধিকতর জটিল চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
মেছতা নির্ণয়ের পদ্ধতি:
মেছতা নির্ণয়ের জন্য একটি লাইট পরীক্ষার মাধ্যমে (যেমন: উডস ল্যাম্প) ডাক্তারেরা ইপিডারমাল ও ডার্মাল মেছতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ত্বকের বিভিন্ন স্তরের মেলানিনের ঘনত্ব ও অবস্থান নির্ধারণ করা যায়।
মেছতা হলে করণীয় :
সানস্ক্রিন ব্যবহার, বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ, যদি মেছতা বেশি বাড়তে থাকে, তবে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।হরমোনাল চিকিৎসা হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
মেছতা চিকিৎসায় হাইড্রোকুইনোন ব্যবহারের পরেও যদি সমস্যা ফিরে আসে, তখন ক্লিগমেজ ফর্মুলা ব্যবহার করা একটি কার্যকরী পদ্ধতি। ক্লিগমেজ ফর্মুলায় সাধারণত হাইড্রোকুইনোনের সাথে স্টেরয়েড, ভিটামিন ‘এ’ ডেরিভেটিভ, এবং ট্রিটিনাইন একত্রিত করা হয়। এটি ত্বকের মেছতা দূর করতে সহায়ক এবং সাধারণত রাতে মুখে লাগানো হয়।
ক্লিগমেজ ফর্মুলার উপাদান:
হাইড্রোকুইনোন ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং মেছতা কমাতে কার্যকর।স্টেরয়েড ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।ভিটামিন ‘এ’ ডেরিভেটিভ (যেমন: রেটিনয়েড): ত্বকের পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং মেছতার স্থায়িত্ব কমাতে সাহায্য করে।ট্রিটিনাইন ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে সহায়ক।
এই ফর্মুলার ব্যবহারে বেশিরভাগ সময় মেছতা কমে আসে, তবে এর কার্যকারিতা এবং প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে ত্বকের ধরন এবং মেছতার অবস্থার উপর। ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময় উত্তম।