শিশুদের ভাষা শিক্ষায় মোবাইল আসক্তির প্রভাব

শিশুদের ভাষা শিক্ষায় মোবাইল আসক্তির প্রভাব 


শিশুদের ভাষা শিক্ষায় মোবাইল আসক্তির প্রভাব


ক্ষতিকর প্রভাব:

  1. দৃষ্টির সমস্যা: দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে তাকানোর ফলে চোখের ওপর চাপ পড়তে পারে, যা চোখের ক্লান্তি এবং দৃষ্টির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির জন্য মারাত্মক হতে পারে।

  2. শারীরিক স্বাস্থ্য: স্ক্রিনের সামনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে শারীরিক সক্রিয়তা কমে যায়, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্থূলতা ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  3. মানসিক বিকাশ: স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে শিশুদের সামাজিক এবং আবেগজনিত বিকাশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তারা মুখোমুখি যোগাযোগের অভাবে আকারে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।

সমাধান:

  • নিয়মিত বিরতি: শিশুদেরকে স্ক্রিন থেকে বিরতি নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। প্রতি ঘণ্টায় কিছু সময়ের জন্য স্ক্রিন বন্ধ রেখে অন্য কিছু করতে বলুন।

  • বিকল্প কার্যকলাপ: বই পড়া, খেলা, এবং সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে শিশুদেরকে ব্যস্ত রাখুন, যাতে স্ক্রিনের প্রতি তাদের আকর্ষণ কমে যায়।

  • অভিভাবকদের ভূমিকা: পরিবারের বড়দের উচিত স্ক্রিন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং শিশুদের সামনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা।

শিশুরা যদি দীর্ঘ সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে তা তাদের চোখের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানোর ফলে শিশুরা চোখের ক্লান্তি, ঝাপসা দেখা এবং অন্যান্য দৃষ্টির সমস্যা সম্মুখীন হতে পারে।

এছাড়া, শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রেও স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস গুরুতর ক্ষতি সাধন করতে পারে। শিশুদের ভাষাগত বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান, সামাজিক দক্ষতা কমে যাওয়া এবং সৃজনশীলতা হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে, মুখোমুখি যোগাযোগের অভাব ভাষার দক্ষতা ও সামাজিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য, যা স্ক্রিনে সময় কাটানোর ফলে হ্রাস পায়।

শিশুদের ভাষাগত দক্ষতার বিকাশের জন্য নিয়মিত সামাজিক ও শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মুখোমুখি যোগাযোগ ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শিশুদের শব্দভাণ্ডার ও ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক।

শিশুদের স্ক্রিনের প্রতি আসক্তি তাদের কগনিটিভ বা জ্ঞানীয় বিকাশে বাধা প্রদান করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন শিশুরা প্রাথমিকভাবে ভাষা শেখা শুরু করে, তখন স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানো সেই শিক্ষার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এস্তোনিয়ার গবেষকদল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, শিশুদের স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করার অভ্যাস তাদের পিতামাতার আচরণকে অনুসরণ করেই গড়ে ওঠে। যদি বাবা-মা নিজেদের জন্য স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটান, তবে শিশুদেরও সেই অভ্যাস গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে, তারা সামাজিক যোগাযোগ এবং মুখোমুখি কথোপকথন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যা তাদের ভাষাগত ও সামাজিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্ক্রিনের প্রতি আসক্তির কারণে শিশুদের মনোযোগ এবং সৃজনশীলতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এটি শিশুদের জ্ঞানীয় কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

শিশুদের ভাষা শিক্ষায় মোবাইল আসক্তির প্রভাব


তারতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক ডাক্তার টিয়া তুলভিস্তে নবজাতকদের ভাষার দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ছোটবেলায় শিশুদের বিকাশের সময়ে বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা শিশুর সঙ্গে খেলাধুলার মাধ্যমে কথোপকথন করেন। এই কথোপকথন শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের এই কথোপকথনের মাধ্যমে শিশুরা শব্দ, বাক্য এবং সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশুর ভাষা শেখার প্রক্রিয়ায় পরিবারের পরিবেশ এবং বড়দের আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের সঙ্গে সংলাপ এবং খেলার মাধ্যমে তাদের শিখতে সাহায্য করা হলে, ভাষার দক্ষতা দ্রুত উন্নতি লাভ করে।

ডাক্তার টিয়া তুলভিস্তের গবেষণা থেকে দেখা যায়, শিশুদের বয়সের সঙ্গে তাদের উচ্চারণ এবং ব্যাকরণগত দক্ষতা চর্চার মাধ্যমে উন্নত হয়। কিন্তু যদি শিশুদের সময় মোবাইল বা ল্যাপটপের দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়, তাহলে তাদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। গবেষকেরা একটি পরীক্ষায় শিশু এবং তাদের বাবা-মায়েদের মধ্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে কাটানো সময়ের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী তিনটি ভিন্ন দলে ভাগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করেন।

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু নিয়মিতভাবে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথোপকথনে যুক্ত থাকে, তাদের ভাষার দক্ষতা অন্যান্য শিশুদের তুলনায় অনেক উন্নত। এই কারণে, শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে এবং ভাষাগত দক্ষতা অর্জনে বাবা-মায়ের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, শিশুরা যদি ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তাদের সামাজিক এবং ভাষাগত দক্ষতা বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষকেরা এ বিষয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে বাবা-মা ও প্রতিপালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়।


তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url