আল্লাহর কাছে রিজিক চাওয়ার দোয়া

আল্লাহর কাছে রিজিক চাওয়ার জন্য কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা মুসলিমরা নিয়মিতভাবে পাঠ করতে পারেন। আল্লাহর কাছে রিজিক প্রার্থনা করা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। 


আল্লাহর কাছে রিজিক চাওয়ার দোয়া


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতা, এবং তিনিই আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সকল প্রয়োজন মেটানোর উৎস। আল্লাহর কাছে রিজিক প্রার্থনা করার জন্য আমরা বিভিন্ন দোয়া ও আমল করতে পারি, যা আমাদের রিজিক বৃদ্ধি এবং বরকতের জন্য সহায়ক হয়।

এখানে একটি জনপ্রিয় দোয়া উল্লেখ করা হলো, যা রিজিক ও প্রাচুর্য লাভের জন্য কার্যকর বলে বিবেচিত: 


উচ্চারণ:  اللّهُمّ إنّي أسأَلُكَ رِزْقًا طَيّبًا وَعِلْمًا نَافِعًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلاً

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিজকান তাইইবান ওয়া ইলমান নাফিয়ান ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালান।

বাংলা অর্থ:
"হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হালাল রিজিক, উপকারী জ্ঞান এবং গ্রহণযোগ্য আমল চাই।"

এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ রিজিক, জ্ঞান এবং আমল কবুল করার তৌফিক দান করবেন ইনশাআল্লাহ।


উচ্চারণ: اللّهُمَّ أَنتَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা আর-রায্জাকু যুল কুּওয়াতিল মাতীন।

বাংলা অর্থ:
"হে আল্লাহ! তুমি রিজিকদাতা, শক্তিশালী এবং দৃঢ়।"

এই দোয়া পাঠ করে আল্লাহর কাছে রিজিকের জন্য প্রার্থনা করা যেতে পারে।


উচ্চারণ: وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْءًا كَبِيرًا

বাংলা উচ্চারণ: ওয়ালা তাক্তুলু আওলাদাকুম খাশইয়াতা ইমলাক। নাহনু নারযুকুহুম ওয়া ইয়াকুম। ইননা কাতলাহুম কান খিতআন কাবীরা।

বাংলা অর্থ:

"তোমরা তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না। আমরা তাদেরও রিজিক দেই এবং তোমাদেরও রিজিক দেই। নিঃসন্দেহে, তাদের হত্যা করা গুরুতর পাপ।"

(সূরা আল ইসরা, আয়াত: ৩১)

এই আয়াতটি আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখার এবং রিজিকের জন্য তাঁর উপর নির্ভরশীল থাকার নির্দেশ দেয়।


উচ্চারণ: اللّهُمّ إني أسألك من فضلك ونعمتك ورزقك.

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা ওয়া নিআমাতিকা ওয়া রিজকিকা।

বাংলা অর্থ:

"হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ, দয়া এবং রিজিক প্রার্থনা করছি।"

এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ, দয়া ও রিজিক প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।


রিজিকের জন্য বিশেষ কিছু আমল:

রিজিক বৃদ্ধির জন্য ইসলামে কিছু বিশেষ আমল ও দোয়া করা যায়, যা আমাদের জীবনে বরকত ও প্রাচুর্য নিয়ে আসে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক আমল করার মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি এবং বরকত প্রদান করেন। এখানে কিছু আমল উল্লেখ করা হলো, যা রিজিক বৃদ্ধিতে সহায়ক:

১. ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা

নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করলে আল্লাহ আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং রিজিকের দরজা খুলে দেন।

  • ইস্তিগফারের দোয়া: "আস্তাগফিরুল্লাহ" (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই)।

২. দরুদ শরীফ পাঠ করা

নবীজীর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করলে আল্লাহ আমাদের জীবনে রিজিকের বরকত দান করেন। নিয়মিত দরুদ শরীফ পড়া একটি বরকতময় আমল।

৩. ফজরের সালাত আদায় করা

ফজরের নামাজ পড়ার পর কিছু সময় দোয়া করা ও আল্লাহর কাছে রিজিক চাওয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ। যারা ফজরের পর সক্রিয় থাকেন এবং আল্লাহর কাছে রিজিকের জন্য দোয়া করেন, তাদের জীবনে রিজিকের প্রাচুর্য আসে।

৪. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) রাখা

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রাখা যে তিনিই রিজিকদাতা এবং তিনিই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পরিশ্রম করলে তিনি রিজিকের বরকত প্রদান করেন।

৫. সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করা

প্রতিদিন মাগরিবের পর সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করা রিজিক বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি আমাদের দারিদ্র্য থেকে রক্ষা করে।

৬. পরিশ্রম ও সততা

আল্লাহ আমাদের সততা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে রিজিক দান করেন। সৎ উপায়ে উপার্জনের মাধ্যমে রিজিকের বরকত বাড়ে এবং আল্লাহ এতে খুশি হন।

৭. অন্যকে দান করা

সাধ্য অনুযায়ী গরিব-দুঃখী, মিসকিন ও এতিমদের প্রতি সাহায্য করা রিজিকের বরকত আনতে সহায়ক। আল্লাহ দানকারীর জীবনে বেশি করে রিজিক দান করেন।

৮. তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা

রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা এবং আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন ও রিজিকের জন্য দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এই নামাজ পড়ে দোয়া করেন, তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৯. আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

প্রত্যেক সালাতের পরে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের রিজিকের রক্ষা ও বরকত বৃদ্ধিতে সহায়ক।

১০. পরিবার ও আত্মীয়দের সাথে ভালো আচরণ

পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের পাশে থাকা রিজিক বৃদ্ধির কারণ হয়।

কিছু উপদেশ

  • আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল (বিশ্বাস) রাখা যে তিনি আমাদের রিজিক প্রদান করবেন।
  • হারাম থেকে দূরে থাকা এবং হালাল রিজিকের জন্য প্রার্থনা করা।
  • সততার সাথে পরিশ্রম করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে জীবিকার জন্য চেষ্টা করা।

আল্লাহ আমাদের সকলকে হালাল রিজিক দান করুন এবং জীবনে বরকত দান করুন। আমিন।

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url