আমি তাকে ভালোবাসি

 আমি তাকে ভালোবাসি

একটি ছোট্ট শহরে ছিল এক যুবক, তার নাম আরিফ। সবার চোখে সে ছিল একটি সাধারণ ছেলে, খুবই নিরীহ ও শান্ত। তার জীবন ছিল একেবারে সাদাসিধে—কোনো বড় আশা বা স্বপ্ন ছিল না। কিন্তু আরিফের এক অভ্যেস ছিল, যখন সে সময় পেত, তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবত। তার চোখে ছিল কিছু গভীর চিন্তা, কিছু অসম্পূর্ণ গল্প, যা সে কখনো কারও সাথে শেয়ার করেনি। কিন্তু তার মন ছিল অনেক বড়, অনেক গভীর।

আমি তাকে ভালোবাসি

আরিফের জীবনে একদিন এমন একজন মেয়ের আগমন ঘটল, যিনি তার জীবনটাকে পুরোপুরি বদলে দিলেন। মেয়েটির নাম ছিল রাইসা। রাইসা ছিল শহরের সবচেয়ে প্রিয় মেয়েটি। তার হাসি, তার চোখের দৃষ্টিতে এমন এক সৌন্দর্য ছিল, যা পুরো শহরকে আকর্ষণ করত। রাইসা ছিল সবার কাছে জনপ্রিয়, কিন্তু সে কখনো নিজের গুরুত্ব বুঝতে চাইত না। সে ছিল একেবারে সাধারণ, খুবই বিনয়ী। আরিফ ও রাইসার প্রথম দেখা হয়েছিল এক গ্রীষ্মের বিকেলে, শহরের প্রধান সড়কে।

আরিফ যখন এক দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু কিনছিল, রাইসা তার পাশে এসে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পর তাদের চোখের সাক্ষাৎ ঘটল। রাইসার চোখের মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা আরিফের মনকে ছুঁয়ে গেল। তার সেই মিষ্টি হাসি, তার চোখের জ্যোতি, সব কিছুতেই ছিল এক অদ্ভুত মাধুর্য। আরিফের মনে একটা অজানা অনুভূতি জাগ্রত হল, যা সে কখনো আগে অনুভব করেনি। সে কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু তার মুখ থেকে শব্দ বের হলো না। শুধু চুপচাপ তাকিয়ে রইল। রাইসা একটু হাসল এবং এগিয়ে চলে গেল।

সে দিন থেকে আরিফের জীবনে অনেক কিছু বদলে গেল। তার মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ছিল, যা আগে ছিল না। রাইসার সেই হাসি, তার সেই চোখ, সব কিছুই যেন তার মনে আটকে ছিল। সে জানত না কেন, কিন্তু সে রাইসাকে বারবার ভাবতে লাগল। সে বুঝতে পারল, সে তার প্রতি কিছু একটা অনুভব করছে, যা শুধু একটি আকর্ষণ নয়, এটি আসলে ভালোবাসা।

আরিফ রাইসাকে আরও একাধিকবার দেখেছিল, কিন্তু সে সাহস করে কিছু বলল না। কারণ, সে জানত, তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল। রাইসা ছিল শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেয়ে, এবং আরিফ ছিল এক সাধারণ ছেলে। তার মনে এক ভীতি ছিল, যে রাইসা তাকে কখনো বুঝবে না, কখনো তার অনুভূতি শেয়ার করবে না। কিন্তু আরিফের মন বারবার তাকে ভালোবাসতে চাইছিল।

একদিন, আরিফ আর রাইসা এক বাগানে একসাথে হাঁটছিল। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত, আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ। রাইসা একটু থেমে দাঁড়িয়ে বলল, "আকাশটা দেখো, আরিফ। কত সুন্দর, কী শান্ত।"

আরিফ একটু হেসে বলল, "হ্যাঁ, চাঁদের মতো শান্ত।"

রাইসা হালকা হাসল এবং বলল, "তুমি জানো, আমি মাঝে মাঝে মনে করি, চাঁদের আলোও আমাদের মতো মনের অন্ধকার দূর করে দেয়।"

আরিফ রাইসার দিকে তাকিয়ে বলল, "হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। চাঁদ যেমন আমাদের রাতের পথ দেখায়, তেমনই কিছু মানুষ আমাদের জীবনের পথ দেখায়।"

রাইসা একটু চুপ করল, তারপর বলল, "তুমি কি জানো, অনেক সময় আমি মনে করি, কিছু জিনিস চুপচাপই ভালো থাকে। কেউ কখনো সেটা বুঝতে পারে না, কিন্তু সেটা আসলে সত্যি হয়।"

আরিফ একটু থেমে গেল, তার চোখে এক অজানা উত্তেজনা। সে জানত, এখনই তাকে তার মনের কথা বলার সময় এসেছে। সে গভীরভাবে রাইসার দিকে তাকিয়ে বলল, "রাইসা, আমি... আমি তোমাকে ভালোবাসি।"

রাইসা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। আরিফের মধ্যে এক অদ্ভুত ভয় কাজ করছিল। সে মনে মনে ভাবছিল, 'এটা যদি ভুল হয়ে যায়? যদি রাইসা আমাকে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে তাকায়?'

কিন্তু রাইসা কিছুক্ষণ পরে অদ্ভুতভাবে এক মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, "আমি জানতাম, তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি তোমার মনের কথা অনেক দিন ধরে বুঝতে পেরেছি।"

আরিফ অবাক হয়ে বলল, "তুমি জানলে?"

রাইসা হ্যাঁ বলে মাথা নেড়ে বলল, "হ্যাঁ, তোমার চোখে আমি সব কিছু পড়তে পারি। তুমি যখন আমার দিকে তাকাও, তখন আমি বুঝতে পারি তুমি কী ভাবছো।"

এ কথায় আরিফের মনে একটি শান্তি ফিরে এলো। তার মনে হলো, যে কথা সে বহুদিন ধরে লুকিয়ে রেখেছিল, তা এখন মুক্তি পেয়েছে। রাইসার কথায় মনে হল, তার ভালোবাসা একেবারে সঠিক জায়গায় পৌঁছেছে। তারা দুজন একে অপরকে গভীরভাবে ভালোবাসতে শুরু করল, তাদের সম্পর্ক দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠল।

তবে, তাদের প্রেমের পথে অনেক বাধা ছিল। রাইসার পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। তারা চেয়েছিল, রাইসা এমন একজন প্রার্থীকে বেছে নিক, যার সামাজিক অবস্থান অনেক উঁচু। কিন্তু রাইসা আর আরিফ একে অপরকে ভালোবাসত, এবং তারা একসাথে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল। অনেক কষ্ট, অনেক সংগ্রাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা একে অপরের কাছে ফিরে এল। তাদের প্রেম সব বাধাকে অতিক্রম করে বিজয়ী হলো।

শেষমেষ, রাইসা আর আরিফের ভালোবাসা জয়ী হলো। তাদের জীবনে সুখের সূর্যোদয় হলো, আর তারা জানলো, ভালোবাসা কোনো সময়, কোনো জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি দুজনের হৃদয়ে এবং তাদের সম্পর্কের গভীরে স্থায়ীভাবে অবস্থিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url