দুষ্টু মিষ্টি রোমান্টিক প্রেমের গল্প
দুষ্টু মিষ্টি রোমান্টিক প্রেমের গল্প
ছোট্ট শহরের এক কোণে, সবুজ ঘাসে ঘেরা শান্ত এক কলেজ ক্যাম্পাস। এখানেই শুরু হয় রাহাত আর প্রিয়ার কাহিনী। রাহাত, একজন হাসিখুশি এবং দুষ্টু মেজাজের ছেলে, সবসময় তার বন্ধুবান্ধবের মাঝে আনন্দ ছড়ায়। প্রিয়া, অন্যদিকে, ছিল শান্ত, মিষ্টি মেয়ে। সবকিছুতেই তার বিশেষ রুচি এবং ভদ্র স্বভাব সবাইকে আকর্ষণ করত।
"রাহাত আর প্রিয়ার দুষ্টু মিষ্টি মুহূর্ত, যেখানে প্রেমের প্রতিটি খুনসুটি আর অভিমান একে অপরকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।" |
প্রথম দেখা
একদিন কলেজের লাইব্রেরিতে রাহাত প্রথমবার প্রিয়াকে দেখে। প্রিয়ার হাতে তখন একটা বই – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। রাহাত তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, এই মেয়েটার সঙ্গে তাকে কথা বলতেই হবে। তবে প্রিয়ার সামনে গিয়ে কথা বলা সহজ ছিল না। কারণ প্রিয়া তার বই আর পড়াশোনার মধ্যে এতটাই ব্যস্ত যে চারপাশে কী হচ্ছে, তা যেন খেয়ালই নেই।
শুরুটা দুষ্টুমির
পরের দিন, রাহাত তার দুষ্টুমির পরিকল্পনা শুরু করে। লাইব্রেরিতে প্রিয়ার বইয়ের মাঝখানে একটা মজার নোট লিখে রেখে দেয় – “এই বইয়ের মাঝে একটা হাসি আছে, সেটা খুঁজে বের করো।” প্রিয়া নোটটা দেখে একটু বিরক্ত হলেও ভেতরে ভেতরে হাসি চাপতে পারেনি।
বন্ধুত্বের শুরু
এভাবেই রাহাতের দুষ্টুমি প্রিয়ার প্রতি কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে। ধীরে ধীরে তারা কথা বলতে শুরু করে। প্রিয়ার বই পড়ার অভ্যাস আর রাহাতের দুষ্টুমির মধ্যে এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পায় তারা। একদিন প্রিয়া জানতে পারে, রাহাতও লেখালেখি করতে ভালোবাসে। তখন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে।
প্রেমের ফুল ফোঁটা
এক সন্ধ্যায়, কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাহাত প্রিয়ার জন্য কবিতা লেখে এবং মঞ্চে সেটা পড়ে শোনায়। সবাই যখন করতালি দেয়, প্রিয়া তখন বুঝতে পারে, রাহাতের মনের গভীরে কী চলছে। অনুষ্ঠান শেষে, প্রিয়া রাহাতের কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে বলে, “তোমার কবিতা খুব সুন্দর ছিল।” রাহাত হাসতে হাসতে বলে, “কবিতার মতো সুন্দর তুমি।”
রাহাত আর প্রিয়ার বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে আরও গভীর হতে থাকে। প্রতিদিন তাদের কথা, হাসি, আর দুষ্টুমি যেন এক নতুন গল্প রচনা করত। তবে রাহাতের মন যে শুধুই বন্ধুত্বের জন্য লাফালাফি করছে না, তা তার প্রতিটি আচরণে বোঝা যাচ্ছিল।
একদিন কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির সময় রাহাত আর প্রিয়া একসঙ্গে কাজ করছিল। প্রিয়ার পছন্দের কবিতা ও গানের তালিকা তৈরি করছিল তারা। প্রিয়ার মিষ্টি হাসি আর একাগ্র মনোযোগ দেখে রাহাত মনের ভেতরে এক অজানা অনুভূতি টের পায়।
সাহসী পদক্ষেপ
বিশেষ মুহূর্ত
প্রিয়া এই কবিতা শুনে অভিভূত হয়ে পড়ে। তার মন বুঝতে পারে, রাহাতের হাসি-ঠাট্টার আড়ালে লুকিয়ে থাকা গভীর ভালোবাসার কথা। অনুষ্ঠান শেষে রাহাত একটু ভয়ে ভয়ে প্রিয়ার সামনে দাঁড়ায়।
“কবিতাটা কেমন লাগল?” রাহাত প্রশ্ন করে।
প্রিয়া একটু লজ্জা পেয়ে মৃদু হেসে বলে, “খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?”
রাহাত গভীর শ্বাস নিয়ে বলে, “হ্যাঁ, বলতে চাই। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
প্রিয়ার উত্তর
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “তোমার মতো দুষ্টু আর পাগলাটে মানুষকে না ভালোবেসে থাকা অসম্ভব। আমিও তোমাকে ভালোবাসি, রাহাত।”
সেই মুহূর্তেই তাদের সম্পর্কের প্রথম পর্ব পূর্ণতা পায়। ভালোবাসার এই ফুল ফুটে ওঠে এমনভাবে, যা তাদের জীবনজুড়ে সুগন্ধ ছড়ায়।
ঝগড়া আর অভিমান
প্রেম যতই মধুর হোক, ঝগড়া আর অভিমান যেন তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাহাত আর প্রিয়ার মধ্যেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তাদের সম্পর্কের দুষ্টু-মিষ্টি ধারা চলতে চলতে একদিন বড়সড় ঝগড়ার রূপ নেয়।
দুষ্টুমির সীমা অতিক্রম
একদিন কলেজের ক্লাস শেষে রাহাত তার বন্ধুদের সামনে মজা করতে করতে প্রিয়ার ব্যক্তিগত একটি কথা বলে ফেলে। যদিও রাহাতের উদ্দেশ্য ছিল শুধু হাসি-ঠাট্টা, কিন্তু প্রিয়া এতে ভীষণ কষ্ট পায়। তার জন্য এই বিষয়টি ছিল খুবই ব্যক্তিগত, আর রাহাত তা নিয়ে মজা করায় তার মনে অভিমান জমে।
প্রিয়া রেগে রাহাতকে বলে, “তুমি কখনোই সিরিয়াস হতে পারো না, তাই না? নিজের দুষ্টুমির জন্য সবকিছুকে হালকা করে দাও। কিন্তু আমার অনুভূতিগুলোও যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কি কখনো ভেবেছো?”
রাহাত তখন প্রিয়াকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে সে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করেনি। কিন্তু প্রিয়া সেই মুহূর্তে কিছুই শুনতে চায়নি। সে রাগ আর অভিমানে রাহাতের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
দূরত্বের কষ্ট
এরপর দিনগুলো তাদের জন্য বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসে একে অপরকে দেখা হলেও তারা কথা বলে না। রাহাত ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড কষ্ট পায়। প্রিয়ার অভিমান যেন তার সমস্ত আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, প্রিয়াও এই দূরত্বে কষ্ট পেতে থাকে, কিন্তু তার মনে তখনো অভিমান কাজ করছিল।
অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা
রাহাত বুঝতে পারে, সম্পর্কের মধ্যে দুষ্টুমির পাশাপাশি দায়িত্ববোধও থাকতে হয়। সে প্রিয়াকে ফেরানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা করে। একদিন সে প্রিয়ার প্রিয় জায়গা, কলেজের বাগানে, ছোট্ট একটি চিঠি রেখে যায়। চিঠিতে লেখা ছিল:
সম্পর্কের পুনর্মিলন
প্রিয়া চিঠিটা পড়ে রাগ কিছুটা গলে যায়। পরের দিন রাহাত প্রিয়ার সামনে এসে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চায়। সে বলে, “তোমার অনুভূতিকে কষ্ট দিয়ে আমি বড় ভুল করেছি। আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও, প্রিয়া। তোমার মন না পেলে আমি আর দুষ্টু রাহাত থাকব না।”
প্রিয়া মৃদু হেসে বলে, “তুমি সত্যিই বড় বোকা। তবে আমি বোকা রাহাতকেই ভালোবাসি। আর কখনো এমন দুষ্টুমি করো না।”
তাদের এই অভিমান আর মিলন সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে, যেখানে ভালোবাসার গভীরতা আরও বাড়ে।
সুখের সমাপ্তি
রাহাত ও প্রিয়ার প্রেম ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাদের সম্পর্কের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল দুষ্টুমি, হাসি, অভিমান, আর একসঙ্গে কাটানো অসংখ্য স্মৃতিতে ভরা। তারা বুঝতে পারে, জীবনের প্রকৃত আনন্দ একে অপরের সঙ্গে থাকার মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
পরবর্তী অধ্যায়
কলেজ জীবন শেষ হওয়ার পর তারা নতুন অধ্যায় শুরু করে। রাহাত একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পায়, আর প্রিয়া তার স্বপ্ন পূরণের জন্য উচ্চশিক্ষায় পা বাড়ায়। যদিও কাজের ব্যস্ততা তাদের জীবনে আসে, তবুও তাদের ভালোবাসা আগের মতোই অটুট থাকে।
ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি
প্রিয়া আবেগে ভরা চোখে বলে, “তোমার দুষ্টুমি থেকে শুরু করে তোমার প্রতিটা কাজ আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আমি সারাজীবন তোমার সঙ্গেই থাকতে চাই।”
সুখের পরিণতি
তারা বিয়ে করে। তাদের ভালোবাসা শুধু দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; তা তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। তাদের সংসারে দুষ্টুমি, হাসি আর মিষ্টি মুহূর্তগুলো আরও বাড়তে থাকে।
তাদের এই দুষ্টু-মিষ্টি গল্পের সমাপ্তি ছিল আনন্দে ভরা, যেখানে ভালোবাসা তাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে রঙিন করে তোলে। সুখের সমাপ্তি মানে তাদের গল্পের শেষ নয়, বরং এক নতুন, সুন্দর জীবনের শুরু।