অন্তরে অতৃপ্তি

 অন্তরে অতৃপ্তি

ঝুম বৃষ্টিতে গ্রামের মেঠোপথ ভিজে গেছে। চারদিকে সবুজের মেলা, কিন্তু মনটা যেন একেবারে শুকিয়ে আছে। রূপা বসে আছে উঠোনের একপাশে। তার চোখে এক ধরনের অপূর্ণতার ছাপ, যা সহজেই চোখে পড়ে।

অন্তরে অতৃপ্তি
"অন্তরের অতৃপ্তি: স্বপ্ন হারানোর গল্প, পুনরুদ্ধারের পথ।

রূপার জীবনটা বাইরে থেকে দেখলে পারফেক্ট মনে হতে পারে। সংসারে স্বামী, দুটি সন্তান—সবই আছে। কিন্তু কোথায় যেন একটা শূন্যতা। ছোটবেলায় রূপা স্বপ্ন দেখেছিল একজন লেখক হবে। স্কুলের দেয়ালপত্রিকায় তার লেখা গল্পগুলো সবাই প্রশংসা করত। কিন্তু সংসারের চাপে, নিজের স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলেছে।

আজকের বৃষ্টির দিনটা তাকে তার পুরোনো দিনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তার মনে পড়ে গেল, কলেজে থাকা সময়ের সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলো। রূপা তখন সাহিত্যের ক্লাসে সবচেয়ে ভালো ছিল। কিন্তু লেখালেখি তার জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠতে পারেনি।

রূপার স্বামী রবিন একজন ব্যবসায়ী। সংসার নিয়ে ব্যস্ততার মাঝে রূপার মনের অতৃপ্তি বুঝতে পারে না। একদিন রবিন রূপাকে জিজ্ঞেস করেছিল, "তোমার মন খারাপ কেন? আমাদের জীবনে তো সবকিছু আছে!" রূপা হেসে বলেছিল, "সব আছে, কিন্তু আমার ভেতরে কিছু নেই।"

রাতে শুয়ে শুয়ে রূপা ভাবতে থাকে, কেন তার এই অতৃপ্তি। একসময় সিদ্ধান্ত নিল, সে তার পুরোনো শখটা আবার শুরু করবে। কিন্তু কিভাবে? সংসার, সন্তান, দায়িত্ব—এইসবের মাঝে সময় বের করাই তো কঠিন।

পরের দিন সকালে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে, রান্নাবান্নার ফাঁকে রূপা তার পুরোনো ডায়েরিটা বের করল। ডায়েরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক সময় তার চোখ পড়ল কলেজের প্রথম কবিতার উপর। "জীবনের মানে" শিরোনামের সেই কবিতাটা তাকে যেন আবার জীবিত করে তুলল।

তারপর থেকে রূপা ঠিক করল, প্রতিদিন রাতে কিছুক্ষণ লিখবে। প্রথম প্রথম সেটা সহজ ছিল না। সংসারের কাজের চাপে মাঝেমধ্যে সে ক্লান্ত হয়ে যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে লেখালেখি তার জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠল।

একদিন রবিন তার লেখা পড়ে বলল, "তুমি তো চমৎকার লিখতে পারো! এসব কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে?" রূপার চোখে আনন্দের অশ্রু। সে বুঝতে পারল, তার ভেতরের শূন্যতা পূর্ণ হতে শুরু করেছে।

রূপা এখন গ্রামের ছোট ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখে। তার গল্পগুলো পাঠকদের মনে দাগ কাটে। জীবনের ছোট ছোট অনুভূতিগুলো তার লেখায় প্রাণ পায়।

অন্তরের অতৃপ্তি মুছে ফেলতে হয়তো সময় লেগেছে, কিন্তু রূপা এখন জানে, নিজের স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যে মানুষ নিজের স্বপ্নের কাছে সৎ থাকে, সে-ই জীবনের প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url