পরীমনি (শামসুন্নাহার স্মৃতি)
পরীমনি (শামসুন্নাহার স্মৃতি)
পরীমনি (শামসুন্নাহার স্মৃতি) হলেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী, যিনি ২৪ অক্টোবর ১৯৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে "ভালোবাসা সীমাহীন" চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে, এবং তারপর থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তার অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে "রানা প্লাজা" (২০১৫), "রক্ত" (২০১৬), "স্বপ্নজাল" (২০১৮), "আমার প্রেম আমার প্রিয়া" (২০১৯), "বিশ্বসুন্দরী" (২০২০), "স্ফুলিঙ্গ" (২০২১), "গুণিন" (২০২২), "অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন" (২০২৩), এবং "মা" (২০২৩) উল্লেখযোগ্য।
পরীমনি (শামসুন্নাহার স্মৃতি): বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, যিনি সৌন্দর্য, স্টাইল এবং প্রতিভার জন্য পরিচিত। |
পরীমনি তার অভিনয় জীবনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন এবং তিনি বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কারে বিজয়ী ও মনোনীত হয়েছেন। এছাড়াও, ২০২০ সালে তিনি ফোর্বস এশিয়ার ১০০ জন সেলিব্রিটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন, যা তার কর্মজীবনের সফলতা এবং জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তার ব্যক্তিগত জীবনও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে, তবে তা তার পেশাগত জীবনে কোনো প্রভাব ফেলেনি। পরীমনি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চলচ্চিত্র তারকা হিসেবে পরিচিত।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
পরীমনি, যিনি শামসুন্নাহার স্মৃতি নামে জন্মগ্রহণ করেন, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ছিল কঠিন, কারণ তার মাকে একটি দুর্ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন, যা পরে তার মৃত্যুর কারণ হয়। মাত্র তিন বছর বয়সে পরীমনি মা হারান। তার বাবা মনিরুল ইসলাম, যিনি পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন, পরীমনির মায়ের মৃত্যুর পর তাকে তার নানা শামসুল হক গাজীর কাছে রেখে যান, এবং সেখানে পরীমনি তার ছোটবেলা কাটান।
পরবর্তীতে, তার বাবা মনিরুল ইসলামেরও মৃত্যু হয়। পরীমনির পরিবারে অনেক লড়াই এবং সংগ্রাম ছিল, কিন্তু তার নানা-নানি এবং খালা-খালুদের সান্নিধ্যে তিনি বড় হন। পরীমনি শৈশব থেকেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও তার অঙ্গীকার ও মনোবল তাকে জীবনে সাফল্যের পথে নিয়ে এসেছে, যা পরবর্তীতে তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে প্রতিফলিত হয়েছে।
শিক্ষাজীবন
পরীমনির শিক্ষাজীবন শুরু হয় তার নানা-নানি, যারা ছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, তাদের সান্নিধ্যে। তিনি পিরোজপুরে তার মাতৃশিক্ষায়তনসহ মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। স্নাতক শিক্ষায় তিনি প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন, তবে সেখানে তিনি পড়াশোনা শুরু করেননি। অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর কবিরের ভাষ্যে, পরীমনি ২০১১–১২ সালে ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩.৫ পেয়ে কলেজে ভর্তি হলেও, কলেজে উপস্থিত হননি।
পরবর্তীতে, তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে স্নাতক পড়াশোনা শুরু করেন এবং ২০১১ সালে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন, যা তার ভবিষ্যত ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অভিনয় জীবন:
পরীমনি তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন মডেলিং থেকে এবং এরপর অভিনয়ে পদার্পণ করেন। শুরুর দিকে তিনি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করেন। পরবর্তীতে তিনি ছোটপর্দায় অভিনয় শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে রূপালী পর্দায় পা রাখেন।
পরীমনি তার অভিনয় জীবন শুরু করেন টিভি নাটকে। তিনি সেকেন্ড ইনিংস, এক্সক্লুসিভ, এক্সট্রা ব্যাচেলর, নারী এবং নবনীতা তোমার জন্য মতো নাটকে কাজ করেন। এর মধ্যে নারী ও নবনীতা তোমার জন্য নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তার সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন আমিন খান ও পপি। এই নাটকে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চম্পার সাথে প্রথম কাজ করেন।
তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০১৫ সালে শাহ আলম মন্ডল পরিচালিত ভালোবাসা সীমাহীন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তবে পরীমনি আলোচনায় আসেন রানা প্লাজা চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর। এরপর তিনি একের পর এক সফল চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যেমন পাগলা দিওয়ানা, দরদিয়া, অন্তর জ্বালা, স্বপ্ন জাল, রক্ত এবং মন জানে না মনের ঠিকানা।
তার অভিনয় দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তা তাকে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে নগর মাস্তান, মন জানে না মনের ঠিকানা, রক্ত, মহুয়া সুন্দরী, স্বপ্ন জাল, এবং ইনোসেন্ট লাভ অন্তর্ভুক্ত।
চলচ্চিত্রের তালিকা
পরীমনি: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী, ব্যক্তিজীবন ও ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বারবার শিরোনামে। |
এখানে পরীমনির অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর তালিকা এবং তার ভূমিকা, পরিচালক, এবং কিছু টীকা দেওয়া হলো:
পরীমনির গৃহীত পুরস্কার এবং মনোনয়নের তালিকা:
মোট পুরস্কার:
- বিজয়: ৬
- মনোনয়ন: ২
পরীমনি তার ক্যারিয়ারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার এবং মনোনয়ন লাভ করেছেন, যা তার অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ।
পরীমনির ব্যক্তিগত জীবন:
পরীমনির ব্যক্তিগত জীবন বেশ উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে। তার প্রথম বিবাহ ছিল ২০১০ সালে, যখন তার এসএসসি পাসের আগেই নানার পরামর্শে তিনি গ্রামে বাস করা জাকির হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেনকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। তবে, ইসমাইল বেকার থাকায় এবং যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল চাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই সম্পর্কটি দুই বছর পর ভেঙে যায়।
এর পর, ২০১২ সালে পরীমনি কেশবপুরের ফুটবলার ফেরদৌস কবীর সৌরভের সঙ্গে বিয়ে করেন। তবে, এই সম্পর্কটিও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
২০১৬ সালে সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে পরীমনির সম্পর্ক শুরু হয়। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা বাগদান করেন এবং পরে সংসার পাতেন, তবে তাদের সম্পর্কও বেশি দিন টিকেনি এবং পরবর্তীতে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
৯ মার্চ ২০২০ সালে তিনি সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন, তবে সেসময়ও তাদের সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি এবং সেই বছরেই বিচ্ছেদ হয়।
১৭ অক্টোবর ২০২১ সালে পরীমনি অভিনেতা শরিফুল রাজকে বিয়ে করেন। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি তার গর্ভাবস্থার খবর গণমাধ্যমে জানান। পরে ২২ জানুয়ারি তারা আবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তিনি পুত্র সন্তানের মা হন, যার নাম শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য।
তবে, ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পরীমনি শরিফুল রাজকে বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান, এবং পরদিন কাজী অফিস থেকে কাবিননামা ও ডিভোর্স-সংক্রান্ত চিঠি সংগ্রহ করেন শরিফুল রাজ।
গ্রেফতার:
২০২১ সালের ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পরীমনির বাসায় অনুমোদনহীন মিনিবার পরিচালনা এবং মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।
তাকে গ্রেফতার করার পর প্রথম দফায় ৪ দিনের এবং দ্বিতীয় দফায় ২ দিনের রিমান্ড দেন আদালত। পরীমনি ২৬ দিন কারাগারে থাকার পর ৩১ আগস্ট ২০২১ তার জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ।\
পাদটীকা:
জন্মতারিখ: পরীমনির কলেজের ভর্তির রেজিস্ট্রারের তথ্যানুসারে, তার জন্ম তারিখ ছিল ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর।
নাম: পরীমনির 'পরী' নামটি তার ডাকনাম, যা তার নানি ফাতিমা বেগম দিয়েছিলেন। পরী নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানান, "আমার পরী নামটা আমার নানিমনির দেয়া। তার নানির নাম ছিল পরীবিবি। আমার জন্মের কিছুদিন আগে তার নানি মারা যান আর আমার জন্মের পর আমার নাম পরী হয়ে যায়।" তার সার্টিফিকেট নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি।
মায়ের মৃত্যু: পরীমনির মা মারা গিয়েছিলেন ২০০৭–৮ সালের মধ্যে, তবে অধিকাংশ সূত্র অনুযায়ী পরীমনির বয়স তখন আড়াই থেকে তিন বছর ছিল। পরীমনি নিজেও একটি সাক্ষাৎকারে জানান যে তার মা মারা যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল আড়াই বছর।
প্রাথমিক শিক্ষা: পরীমনি দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন, যেখানে তার নানি ফাতিমা বেগম প্রাক্তন শিক্ষিকা ছিলেন। তার নানির মৃত্যুর পর, বেলায়েত হোসেন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ: অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর কবির বর্ণনা করেন যে পরীমনির নানা শামসুল হক গাজী ভগীরথপুর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং তিনি পরীমনির শিক্ষাগত জীবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।