পরকীয়া: একটি বাংলা গল্প
পরকীয়া: একটি বাংলা গল্প
রিনা এবং তার স্বামী সঞ্জয় একেবারে সুখী জীবন কাটাচ্ছিল। বিয়ে হয়েছে প্রায় ৮ বছর। তাদের একটি ছোট্ট ছেলে ছিল, যার নাম আয়ান। তারা তাদের জীবনে অনেক কিছু অর্জন করেছে। সঞ্জয় একটা ভালো অফিসে কাজ করতো এবং রিনা ছিল একজন গৃহিণী, কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল একজন লেখক হওয়ার। সঞ্জয়ের প্রচেষ্টায় তাদের জীবন চলছিল আনন্দের সাথে, তবে কিছুদিন ধরে রিনা অনুভব করছিল যে, কিছু একটা ঠিক নেই। সঞ্জয়ের সাথে সম্পর্কের মাঝে অদৃশ্য দূরত্ব বাড়ছিল।
"পরকীয়া: সম্পর্কের অন্ধকারে এক অম্লান গল্প" |
একদিন, রিনার কিছু কাজের সূত্র ধরে, সঞ্জয়ের ফোনে একটি অদ্ভুত নাম দেখলো সে। মিথিলা। প্রথমে কিছুই মনে হয়নি। কিন্তু সেই নামটি একাধিকবার তার চোখের সামনে আসছিল। একদিন রিনা সঞ্জয়ের ফোনে থাকা মেসেজগুলো খুঁজে দেখলো এবং বুঝতে পারলো যে, মিথিলার সাথে তার স্বামীর এক ধরনের সম্পর্ক ছিল, যা স্বাভাবিক ছিল না। রিনা হতবাক হয়ে গেলো। এতদিন যার উপর সে পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিল, সে কি কখনও তার প্রতি অবিচার করেছিল?
এটা জানার পর, রিনা খুবই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। সে বুঝতে পারছিল না, তার নিজের জীবন ও সম্পর্ক কীভাবে এতটা অন্ধকারে চলে গেলো। সে জানতে পারলো, সঞ্জয়ের মিথিলা নামের এক সহকর্মীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। মিথিলা ছিল এক অন্য ধরনের নারী, যার সাথে সঞ্জয়ের সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হয়ে উঠেছিল। মিথিলা ছিল খুবই সুন্দরী, মধুর ব্যবহারে পূর্ণ, এবং সে কখনোই সঞ্জয়ের সাথে একাগ্রতায় বিচ্ছিন্ন ছিল না। সঞ্জয়ও তার জীবনের কোনো একসময় মিথিলার কাছে হারিয়ে গিয়েছিল।
রিনা চুপচাপ কিছুদিন অপেক্ষা করলো। সে কিছুই বলেনি। তারপর একদিন, রিনা সঞ্জয়কে মুখোমুখি করলো। সঞ্জয় প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। তবে রিনা তার সাথে কথা বলার পরে সঞ্জয় বাধ্য হয়ে মিথিলার সাথে সম্পর্কের কথা স্বীকার করলো।
রিনা একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। তাকে অসীম কষ্টে ভুগতে হচ্ছিল। কিন্তু সে জানতো, পরকীয়া কোন পরিস্থিতিতেই সঠিক নয়। একটা সম্পর্ককে যদি নষ্ট করা হয়, তবে তার ফলাফল সবসময়ই বেদনাদায়ক হয়। সঞ্জয়ের প্রতি তার ভালোবাসা মিশ্রিত হয়েছিল ক্রোধ এবং ব্যথায়।
এদিকে, সঞ্জয়ের মিথিলা সাথে সম্পর্ক স্থায়ী না হতে পারার কারণে, সে নিজেও কষ্টে ছিল। মিথিলা কিছুদিন পরেই সঞ্জয়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে সঞ্জয়ের মধ্যে গভীর আক্ষেপ ছিল। সে জানতো, রিনা তাকে সবসময় সহ্য করেছে, যত কষ্টই হোক না কেন। সে জানতো, তার ভুলের জন্য রিনা কখনও তাকে ক্ষমা করবে না, তবে সে চেষ্টা করেছিল, শেষ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে।
রিনা কিছুদিন পরেই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে তার সন্তান আয়ানকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করবে। সঞ্জয় যদিও তার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল, তবে রিনা তার বিশ্বাস ফিরে পেতে চায়নি। সে বুঝেছিল, যে পুরানো সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তার আর পুনর্নির্মাণ সম্ভব নয়।
সময়ের সাথে রিনা নিজের জীবন নতুন করে শুরু করলো। তার স্বপ্নকে আবারও আঁকতে শুরু করলো, এবং লেখালেখির কাজ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলো। সঞ্জয় বুঝতে পেরেছিল, তার ভুলের মাশুল তাকে চোকাতে হবে। আর রিনা তার জীবনের স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার করে, পরিবারের প্রতি নতুন করে যত্নবান হয়ে উঠেছিল।
এভাবে পরকীয়া একটি সম্পর্ককে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং তার পরিণতি কেমন হতে পারে, তা রিনা ও সঞ্জয়ের জীবনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।