রাহুল এবং মিতা: ভালবাসার গল্প

 রাহুল এবং মিতা: ভালবাসার গল্প

রাহুল এবং মিতা দুজনেই এক শহরে, এক পাড়ায় বাস করত। রাহুল ছিল এক সাধারণ ছেলে, যে পড়াশোনায় খুব ভালো, কিন্তু আর্থিকভাবে তার পরিবার অনেকটাই অভাবগ্রস্ত ছিল। মিতা ছিল এক ধনী পরিবারের মেয়ে, তার জীবন ছিল একদম আলাদা—ভালো স্কুল, ভালো পোশাক, অনেক বন্ধু-বান্ধবী এবং তার সব কিছুই ছিল। তবে সত্ত্বেও, মিতা ছিল খুব সাধারণ, বিনয়ী, এবং হৃদয়বান। সে কখনোই তার পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতাকে অহংকারের মতো ব্যবহার করেনি।

রাহুল এবং মিতা ভালবাসার গল্প

রাহুল এবং মিতার প্রথম দেখা হয়েছিল একদিন, যখন রাহুল তার প্রিয় বইয়ের দোকানে গিয়ে বসে পড়ছিল। মিতা তখন তার বন্ধুদের সাথে কিছু শপিং করতে আসছিল। দোকানের এক কোণে, বইয়ের অদ্ভুত গন্ধের মধ্যে, রাহুল একটা বই হাতে নিয়ে পড়ছিল। মিতা লক্ষ্য করল রাহুলের চোখের গভীরতা, তার মনোযোগের দিকে তাকিয়ে, যেন সময় থমকে গেছে। তার মনেই হয়নি যে, সে এক অপরিচিত ছেলেকে এত গভীরভাবে দেখছিল। রাহুল কিছুটা অস্বস্তি বোধ করল, কিন্তু মিতা হেসে তাকে বলল, “ভালো বই পড়ছেন মনে হয়?”

রাহুল একটু ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেল, কিন্তু মুচকি হেসে উত্তর দিল, “হ্যাঁ, ভালো বই। আপনি কী বই পড়েন?”

এটাই ছিল তাদের প্রথম কথা। একে অপরের দিকে তাকিয়ে, তারা কিছু সময় শান্ত থেকে পরস্পরের সম্পর্কে আরো জানতে শুরু করল। তাদের কথোপকথন প্রাথমিকভাবে বই নিয়ে শুরু হলেও, দ্রুত তা জীবনের অন্যান্য বিষয়েও চলে আসে। রাহুল জানাল যে, তার পরিবার খুবই সাধারণ, এবং তার বাবা-মা খুবই কষ্ট করে দিনাতিপাত করেন। মিতা বলল, “আমারও মনে হয়, অর্থ আসলে সবকিছু নয়। আমি জানি, অর্থ অনেক কিছু কিনতে পারে, কিন্তু তার জন্য সুখ কেনার মতো কিছু নেই।”

দিনের পর দিন, রাহুল এবং মিতা একে অপরের সাথে আরো বেশি সময় কাটাতে শুরু করল। তারা একে অপরকে জানত, একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিত। মিতা সবার সামনে তার ভালোবাসা, তার বন্ধুত্ব জানিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু রাহুল সেগুলো আরও গোপনে ধারণ করত। কারণ সে জানত, তাদের মধ্যে সামাজিক পার্থক্য রয়েছে, এবং তা কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

একদিন, মিতা রাহুলকে তার বাড়িতে দাওয়াত দিল। সে জানত, তার পরিবার হয়তো রাহুলকে মেনে নেবে না, কিন্তু সে জানত যে, রাহুলের সাথে সময় কাটানো তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল কিছুটা সংকোচ অনুভব করল, কারণ সে জানত যে, তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা মিতার পরিবারের তুলনায় অনেক নিম্ন। তবে মিতা তাকে সাহস দিল। “আমার পরিবার খুব ভালো, তারা তোমাকে স্বাগত জানাবে। আমি জানি, তুমি একজন ভালো মানুষ।”

রাহুল সেদিন মিতার পরিবারের সাথে দেখা করতে গেল। প্রথমে তার কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল, কিন্তু মিতার পরিবারের সদসদের আন্তরিকতা তাকে স্বস্তি দিল। মিতা তার বাবা-মায়ের সামনে রাহুলকে পরিচয় করিয়ে দিল, এবং সবাই রাহুলের ভালো শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে রাহুল বুঝতে পারল, মিতার পরিবার তার আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে খানিকটা সন্দেহজনক। মিতা লক্ষ্য করল, রাহুল কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে, তাই সে চুপিচুপি তার হাত ধরে বলল, “সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এরপর কিছু দিন গেল, রাহুল এবং মিতা একে অপরের সাথে আরো ভালো সময় কাটাতে লাগল। কিন্তু একটা সময়, মিতার বাবা-মা তাদের সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তারা মনে করছিলেন, রাহুলের সঙ্গে মিতার সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে, তার সামাজিক অবস্থান যে এত আলাদা।

একদিন, মিতার বাবা-মা রাহুলকে বললেন, “আমরা জানি, তুমি একজন ভালো ছেলে। কিন্তু তোমার অবস্থান এবং আমাদের অবস্থান আলাদা। আমাদের মেয়ে তোমার সঙ্গে থাকতে পারবে না।”

মিতা তাদের কথায় অবাক হয়ে গেল, কারণ সে জানত যে তার ভালোবাসা, তার অনুভূতি আর্থিক বা সামাজিক অবস্থানের উপরে নির্ভর করে না। সে রাহুলকে চোখে চোখ রেখে বলল, “আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেই হল আমার ভালোবাসা। বাবা, মা, আপনি যদি মনে করেন যে আমি মিতার সঙ্গে থাকব না, তবে আমি আর এখানে থাকব না।”

মিতা তার পরিবারকে জানিয়ে দিল, “আমি রাহুলের সঙ্গে থাকবো, কারণ আমি তাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসা শুধু বাইরের পৃথিবী নয়, অন্তরের গভীরতা বুঝে জানাতে হয়।”

রাহুল এবং মিতা তখন একে অপরকে নির্ভরশীল হয়ে পড়ল, এবং মিতা তার পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হলো যে, সে যা চেয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ভালোবাসা তাদের সত্যিকারের জীবনের প্রাথমিক অধ্যায় হতে পারে, তবে মিতা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাল যে, সে আর তার পরিবারকে ছাড়তে রাজি।

একদিন, রাহুল ও মিতা একেবারে ভিন্ন দুনিয়ায়, তবে এক সাথেই নিজেদের পথ বেঁধে সঙ্গী হয়ে বাঁচতে চলেছিল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url