তিন বন্ধু আর চাঁদের গল্প
তিন বন্ধু আর চাঁদের গল্প
এক ছোট্ট গ্রামে তিন বন্ধু বাস করত। তাদের নাম ছিল রাজু, মীনা এবং আলম। তারা ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে, একে অপরকে খুব ভালোবাসত। তিনজনের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল অসীম, কিন্তু তারা ছিল একেবারে সাধারণ, কোনো বিশেষ প্রতিভা ছিল না। রাজু ছিল একটু হাস্যরসাত্মক, মীনা ছিল মাথাল, আর আলম ছিল স্বপ্নদ্রষ্টা। তাদের জীবনের বড় সমস্যা ছিল চাকরি।
তারা এতদিন বিভিন্ন কাজ খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তবে এই তিনজনের মধ্যে কিছু ছিল যা কখনও হারিয়ে যেত না—তারা একে অপরকে সমর্থন করত এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করত।
একদিন, বসন্তের বিকেলে, তারা গ্রামের বাইরে এক তাজা নদীর তীরে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর, আলম হঠাৎ বলে উঠল, "দোস্তরা, আমি একটা চাঁদ কিনব!"
রাজু এবং মীনা একসাথে হাসল। রাজু বলল, "এটা কি শুনছি? তুমি চাঁদ কিনতে চাও? সেটা কীভাবে সম্ভব?"
আলম একটু গম্ভীর হয়ে বলল, "কেন, পৃথিবীতে কিছুই অসম্ভব নয়। আমাদের যদি ইচ্ছা শক্তি থাকে, তাহলে আমরা সব কিছুই অর্জন করতে পারি।"
মীনা হাসতে হাসতে বলল, "তুমি চাঁদ কিনবে? আচ্ছা, তুমি কীভাবে সেটা করবে? চাঁদ কি বাজারে পাওয়া যায়?"
আলম মুচকি হাসল, "না, আমি চাঁদ কোনও বাজার থেকে কিনতে যাচ্ছি না। আমি নিজের চেষ্টায় চাঁদ কিনব।"
রাজু অবাক হয়ে বলল, "আলম, তুমি কি মজা করছো? চাঁদ তো আকাশে, সেটাকে কেনই বা কেনার কথা ভাবছ?"
আলম একটু ভেবে বলল, "তুমি জানো, আমার একটা স্বপ্ন আছে—বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাফল্য অর্জন করার। আর সেটা আমি চাঁদ কিনে করব।"
মীনা মৃদু হাসি দিয়ে বলল, "দেখো, আলম, তুমি যদি চাঁদ কিনতে পারো, তবে আমি তোমার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবো। কিন্তু, আমি মনে করি এটা খুব বড় এক অবাস্তব ভাবনা।"
আলম একটু ঝুঁকে গিয়ে বলল, "দেখো, রাজু, মীনা, আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই, কখনোই স্বপ্ন দেখতে ভুলবে না। আমি যদি চাঁদ কিনতে পারি, তবে আমি তোমাদেরকে এই মূহুর্তের জন্য সেলিব্রেট করতে দিচ্ছি।"
এভাবে আলমের চাঁদ কেনার পরিকল্পনা নিয়ে অনেক মজা হল। তারা হাসাহাসি করে সময় কাটাল। তবে, আলমের মনে এক গভীর আকাঙ্ক্ষা ছিল—চাঁদ কেনার। তার এই প্রস্তাবনাটা যে একটি মজার গল্প হতে পারে, তা অবশ্য তার বন্ধুদের বুঝতে কিছুটা সময় লাগল।
তারা পরের দিন সকালবেলা আলমকে চাঁদ কেনার জন্য টাকা জমা করতে বলল। রাজু আর মীনা ভাবল, যদি আলম চাঁদ কিনতে চায়, তাহলে তারা তাকে সাহায্য করবে। তারা আলমের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। তারা দেখল আলম অনেক দোকানে যাচ্ছিল, তবে একদম অদ্ভুতভাবে, এক দোকানিও আলমকে চাঁদ বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়নি।
অবশেষে, দিনটি শেষ হলে আলম একদম হতাশ হয়ে ফিরে আসল। রাজু আর মীনা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, "তুমি তো জানো, চাঁদ তো পৃথিবীতে পাওয়া যায় না।"
কিন্তু আলম কিছুতেই মানতে রাজি ছিল না। সে বলল, "তোমরা জানো না, চাঁদ একদিন একভাবে আমাদের হাতেই আসবে।" সে বুঝতে পারল না যে তার স্বপ্ন এত বাস্তবিকভাবে আসবে কী না, তবে তার দৃঢ় ইচ্ছা তাকে আশাবাদী রাখল।
অবশেষে, কয়েক সপ্তাহ পরে, আলমকে চাঁদ কেনার একটি অদ্ভুত উপায় পেয়েছিল। একদিন সন্ধ্যায় সে বলল, "আজ আমি চাঁদ কিনে আনব!"
রাজু এবং মীনা একে অপরকে দেখে চুপ। আলম আবার বেরিয়ে গেল, কিন্তু এবার তার সাথে ছিল এক নতুন পরিকল্পনা। সে শহরের একটি বড় গবেষণাগারে গিয়েছিল এবং সেখানে এক বিজ্ঞানীকে সাক্ষাৎ করেছিল। বিজ্ঞানী তাকে বলেছিল, "হ্যাঁ, তুমি চাঁদ কিনতে চাও, তবে এটা কোন সহজ কাজ নয়।"
আলম বলল, "আমার কাছে টাকা আছে, আমি যে কোনও উপায়ে চাঁদ কিনব।"
বিজ্ঞানী বলল, "তবে চাঁদকে পৃথিবীতে আনার জন্য তোমাকে অনেক বড় গবেষণা ও প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে। আমরা যদি একদিন চাঁদ নিয়ে আসতে পারি, তবে এটি পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বড় অর্জন হবে।"
আলম খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে ফিরে এল। সে তার বন্ধুদের জানাল, "আমি চাঁদ কিনতে যাচ্ছি, তবে সঠিকভাবে।"
এবার তার বন্ধুদের কাছে আলমের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারা বুঝেছিল, আলমের স্বপ্ন একদিন না একদিন সত্যি হবে। সে নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিল, আর এটাই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
কিছুদিন পর, সেই বিজ্ঞানীর সাহায্যে আলম একটি রকেট তৈরি করে চাঁদে যাত্রা শুরু করল। রাজু এবং মীনা দেখছিলো, তারা বুঝতে পারল, আলমের স্বপ্ন কতটা শক্তিশালী ছিল। চাঁদের দিকে তার যাত্রা শুরু হলো, আর সেই সাথে তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নও।
তার যাত্রার গল্প শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল। আলম তার স্বপ্ন পূরণের পথে ছিল, আর তিন বন্ধু একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের অর্থ বুঝতে শিখেছিল।
শেষে, মীনা বলল, "আলম সত্যিই দেখিয়ে দিল, যদি মানুষের ভিতরে কঠোর ইচ্ছা থাকে, তবে কিছুই অসম্ভব নয়।"
সত্যিকারের ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে যে কোন স্বপ্নই অর্জন করা সম্ভব।