ভালোবাসার কিছু কথা

 ভালোবাসার কিছু কথা

একটি গ্রামে বাস করত এক যুবক ও যুবতী, নাম ছিল রাহুল এবং তানিয়া। তারা একে অপরকে জানতো ছোটবেলা থেকে, কিন্তু কখনোই একে অপরের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়নি। তাদের পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল, তবে তারা কখনো ভেবেও দেখেনি যে একে অপরের প্রতি তাদের অনুভূতি কিছুটা আলাদা হতে পারে।

ভালোবাসার কিছু কথা

তানিয়া ছিল গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে, তার হাসি, তার দৃষ্টি, তার কথা বলার ধরন—সব কিছুই ছিল সবার মনে ভালোবাসার অনুভূতি জাগাতে। অন্যদিকে, রাহুল ছিল এক সাধারণ ছেলে, কিন্তু তার চোখে একটা অন্যরকম মাধুর্য ছিল, যা তানিয়াকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছিল। যদিও তারা একে অপরকে জানত, তবুও কখনো সরাসরি একে অপরের কাছে কিছু বলার সাহস পায়নি।

একদিন গ্রামে একটা মেলা হয়েছিল, যেখানে গ্রামের সবাই জড়ো হয়েছিল। সেদিন রাহুল ও তানিয়া প্রথমবারের মতো একে অপরের কাছে গিয়ে কথা বলল। তানিয়া ছিল তার বন্ধুদের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত, আর রাহুল একা একপাশে দাঁড়িয়ে সবার সঙ্গে মেলার আনন্দ উপভোগ করছিল। 

তানিয়ার দৃষ্টি হঠাৎ তার দিকে গিয়ে পড়ল। চোখে চোখ পড়তেই দুজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত সংযোগ অনুভূত হল। তানিয়া একটু হাসল, আর রাহুল তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সেই মুহূর্তটা ছিল তাদের জীবনের প্রথম অভ্যন্তরীণ ভালোবাসার অনুভূতি।

"তুমি একা দাঁড়িয়ে আছ, রাহুল?" তানিয়া হেসে বলল।

"হ্যাঁ, আমি একটু সময় নিচ্ছি। মেলা তো বেশ জমেছে!" রাহুল সামান্য অস্থির হয়ে বলল, তবে তার চোখের মধ্যে একটা অদ্ভুত জ্যোতি ছিল।

তানিয়া একটু দেরি করে বলল, "তুমি জানো, রাহুল, আমাদের মাঝে কখনোই এমন একটা কথা হয়নি, কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা খুব ভালো বন্ধু হতে পারি।"

রাহুল কিছু না বললেও, তার চোখের মধ্যে একটা চুপচাপ সায় ছিল। সে মনে মনে ভাবছিল, এতদিনে কি আসলেই সে ভালোবাসার অনুভূতি অনুভব করতে শুরু করেছে? না, তার তো এতদিন কখনো কিছু অনুভব হয়নি, কিন্তু আজ সেদিন, তানিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে সে কিছু একটা অনুভব করছিল—একটা অবর্ণনীয় দৃষ্টি, যা তার জীবনকে নতুনভাবে দেখতে শেখাচ্ছিল।

তানিয়া হাসল, আর রাহুলও মৃদু হাসি দিল। তারা একসাথে মেলা ঘুরে বেড়াতে লাগল। তানিয়া বিভিন্ন দোকান থেকে উপহার কিনছিল, আর রাহুল তার পাশে দাঁড়িয়ে তাতেই মজা নিচ্ছিল। একে অপরের মধ্যে নতুন কিছু দেখা যাচ্ছিল—এক ধরনের গভীর বন্ধুত্ব যা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হচ্ছিল।

দিনের পর দিন, তাদের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হতে লাগল। তারা একে অপরের অনুভূতিকে বুঝতে শিখেছিল। তানিয়া রাহুলের কাছে গিয়ে বলত, “তুমি জানো, মাঝে মাঝে আমি ভাবি, জীবনে যদি কোন দিন হারিয়ে যেতাম, তবে কি কেউ আমাকে খুঁজে পেত? তুমি তো জানো, আমাদের জীবন কখনও নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে না। কিন্তু তবুও, যদি তুমি আমার পাশে থাকো, তাহলে আমি জানি, কোন পথে হারাবো না।”

রাহুল সেগুলো শুনে একবার মাথা নেড়ে বলল, “তানিয়া, আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসা কখনো হারায় না। সেটা যদি আসল হয়, তবে সেটা একে অপরের মধ্যে চিরকাল থাকবে। তুমি শুধু আমার হাত ধরো, আমরা একসাথে চলতে থাকব। পৃথিবী যত কঠিনই হোক, আমাদের ভালোবাসা সেই কঠিন পথকে সহজ করে তুলবে।”

তানিয়া তার চোখে চোখ রেখে বলল, “আমি জানি, তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না, রাহুল। আমি জানি তুমি আমার পাশে থাকবে। কিন্তু কখনোই মনে রেখো, ভালোবাসা শুধু আবেগের কথা নয়, সেটা একে অপরকে বোঝার, সহ্য করার, একে অপরের হয়ে দাঁড়ানোর বিষয়।”

একদিন সন্ধ্যায়, যখন তারা একসাথে নদীর পাশে বসে আকাশের দিকে তাকাচ্ছিল, রাহুল তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “তানিয়া, আমি কখনোই তোমাকে ভুলবো না। আমি জানি, তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। কিন্তু ভালোবাসা কখনো এমন কিছু নয় যা শুধুই কথা দিয়ে বর্ণনা করা যায়। ভালোবাসা হলো একে অপরের জন্য যত্ন, একে অপরের জন্য আত্মবিশ্বাস।”

তানিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ শুনছিল, তারপর বলল, “তুমি ঠিক বলেছ, রাহুল। ভালোবাসা কোনো অবস্থায় নয়, এটা চলতে থাকা একটি গল্প। একে অপরকে জানার এবং একে অপরকে পরিপূর্ণ করার গল্প। আমরা যখন একে অপরকে ভালোবাসি, তখন সেটি আমাদের পৃথিবীকে আলোকিত করে।”

তাদের সম্পর্ক ক্রমেই আরও গভীর হয়ে উঠল। একদিন রাহুল তানিয়াকে বলল, “তানিয়া, আমি জানি, আমরা দুইজন আলাদা আলাদা জগত থেকে এসেছি, কিন্তু আমাদের মধ্যে যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, তা আমাদের জীবনকে এক সুতোয় বাঁধে। আমরা একে অপরের অভ্যন্তরে থাকা শক্তি দেখেছি। সেই শক্তি দিয়ে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, যতদিন না আমাদের জীবনে নতুন কোনো সমুদ্র আসে।”

তানিয়া হেসে বলল, “তুমি যদি আমাকে কখনো ছেড়ে যাও, রাহুল, তবে জানো, আমি তোমাকে সারাজীবন মনে রাখব। তবে আমি আশা করি, আমরা একে অপরকে কখনো ছেড়ে যাব না।”

এভাবে তাদের ভালোবাসার গল্প চলতে থাকল। ভালোবাসা শুধুমাত্র কথা না, তা ছিল একে অপরকে বোঝা, একে অপরের কাছে থাকার সংকল্প। রাহুল ও তানিয়ার ভালোবাসা ছিল এক সৎ প্রতিশ্রুতি, যা তারা একে অপরকে দিয়েছিল। তারা জানত, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনোই হারায় না। জীবন চলতে থাকলেও, তাদের ভালোবাসা চিরকাল তাদের হৃদয়ে রয়ে গেল।

তাদের গল্প একে অপরের জন্য ভালোবাসার কল্পনা নয়, বরং বাস্তব হয়ে উঠেছিল, যেখানে তারা একে অপরকে সম্মান করেছিল, বুঝেছিল এবং চিরকাল একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ভালোবাসা ছিল না কোনো সীমা, কোনো বাধা—এটা ছিল একে অপরকে আত্মবিশ্বাস ও ভালবাসা দেওয়ার এক অবিচ্ছেদ্য বোধ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url